খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ পৌষ, ১৪৩১ | ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকারে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫, আহত ১০
  মাদারীপুরের কালকিনিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলছে, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

জাহাজে ছেলে হত্যার ঘটনায় শোকে মারা গেলেন বাবা

গেজেট ডেস্ক

চাঁদপুরের হাইমচরে দুই দিন আগে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে যে সাতজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তাদের একজন সজীবুল ইসলাম। ছেলের নির্মম মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেছেন বাবা দাউদ মোল্যা। ছেলের শোকে বাবার এমন মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে শোক বিরাজ করছে।

মঙ্গলবার সজীবুলের মৃত্যুর খবর শোনার পর অনবরত কাঁদতে থাকেন বাবা দাউদ মোল্লা। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্বজনরা। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত পৌনে ১২টার দিকে বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়।

সজীবুলের মামা আহাদ সরদার শুক্রবার সকালে দাউদ মোল্যার মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ ওর (সজীবুল) বিয়ের পাঁচ মাস পূর্ণ হবে। পদোন্নতি হলে বেতন বাড়বে, বড় জাহাজে চাকরি হবে- এ কারণে পরীক্ষা দিয়েছিল। দুই সপ্তাহ আগে বাড়িতে ধান কাটার কাজ করে গেছে। যাওয়ার সময় বাড়িতে বলে গেছে, রেজাল্টের অপেক্ষায় ঘরে বসে না থেকে ছোট একটা জাহাজে কাজ করে আসি, তাতে কিছু রোজগার হবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।’

পাঁচ বছর ধরে জাহাজের বিভিন্ন পদে চাকরি করেছিলেন সজীবুল ইসলাম। সম্প্রতি জাহাজের চাকরিতে পদোন্নতি পেতে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সেই ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন। মাঝের এই সময়টায় বসে না থেকে সপ্তাহ দুয়েক আগে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে গ্রিজার পদে চাকরি নেন।

সজীবুল ইসলামের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নে। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। পাঁচ মাস আগে বিয়ে করেছিলেন সজীবুল।

মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রহমান জানান, জাহাজে হত্যার শিকার সজীবুলের বাবা দাউদ মোল্যার মৃত্যুর সংবাদ রাতেই জানতে পেরেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।

জাহাজে নিহতদের আরেকজন হলেন একই ইউনিয়নের চর যশোবন্তপুর গ্রামের আনিচুর রহমানের ছেলে মো. মাজিদুল ইসলাম (১৬)। মাজিদুল ঝামা বরকাতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় জাহাজে কাজ নিয়েছিল কিশোর মাজিদুল।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরার মহম্মদপুর ও নড়াইল সীমান্তবর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের বহু মানুষ জাহাজে চাকরি করেন। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এমভি সুলতান সানজানা নামের লাইটার জাহাজডুবির ঘটনায় মহম্মদপুরের পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের চারজন নিহত হন। সোমবার এমভি আল-বাখেরা নামের ওই জাহাজ থেকে মোট সাতজনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এর মধ্যে পাঁচজনকে পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়। দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর বাইরে গুরুতর আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালা খালের মুখ এলাকায় মেঘনা নদীর একটি ডুবোচরে এমভি আল-বাখেরা নামের জাহাজটি নোঙর করা ছিল। সোমবার বেলা তিনটার দিকে নৌ পুলিশ লাশগুলো উদ্ধার করে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রক্তাক্ত দেহগুলো জাহাজের কর্মীদের ঘুমানোর কক্ষগুলোতে পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। কারও কারও মাথায় গভীর ক্ষত দেখা গেছে। কারও কারও ছিল গলা কাটা। শরীরের অন্যান্য স্থানেও আঘাত ছিল।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!